শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:৫৫ অপরাহ্ন

রংপুরকে বিদায় করে ফাইনালে বরিশাল

স্পোর্টস ডেস্ক:: রংপুর রাইডার্স ও ফরচুন বরিশালের মধ্যকার ম্যাচে দলীয় লড়াই ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের ব্যক্তিগত দ্বৈরথ। ২২ গজে যেমন সব কিছুতে সাকিব-তামিমের মধ্যে চাপা লড়াই চলছে, মাঠের বাইরেও ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে একই অবস্থা বিরাজ করছে।

বুধবার ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মাঠের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল গ্যালারিতে। শহীদ জুয়েল স্ট্যান্ডের গ্যালারিতে সাকিব ভক্ত ও তামিম ভক্তের মধ্যে হাতাহাতিও হয়েছে। পুরো ম্যাচ জুড়েই ছিল রোমাঞ্চ-উত্তেজনায় ভরপুর। কঠিন শ্বাসরূদ্ধকর এই ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছে তামিমের বরিশাল।

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে রংপুরকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তামিম। কিন্তু বরিশালের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে খেই হারায় রংপুর। শামীম হোসেন পাটোয়ারীর অনবদ্য ৫৯ রানের ইনিংসের সৌজন্যে কোনোরকমে ১৪৯ রানের পুঁজি পায় একবারের চ্যাম্পিয়নরা। জবাবে খেলতে নেমে মুশফিকুর রহিমের দায়িত্বশীল ইনিংসের সুবাদে ৯ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে জয় পায় বরিশাল।

১৫০ রানের লক্ষ্যটা মোটেও কঠিন ছিল না বরিশালের জন্য। কিন্তু যুদ্ধটা ম্যাচ ছাপিয়ে যখন ব্যক্তিগত পর্যায়ের, সেখানে স্নায়ুচাপে পড়তেই হতো দুই দলের ক্রিকেটারদের। দলের পরিকল্পনায় বদল এনে মেহেদী হাসান মিরাজকে ওপেনিংয়ে নামানো হয়। তামিম ছিলেন নন স্ট্রাইকে। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তাকে কেবল সাকিবকে হারালেই হতো না, হারাতে হতো ফজল হক ফারুকীকেও। তামিম অবশ্য বেশিক্ষণ ক্রিজে ছিলেন না, খুব বেশি খেলতে হয়নি ফারুকীর বলও। তবে যে কয়টি বলই খেলেছেন, সেখানে ছিল না কোনও স্বস্তি।

আবু হায়দার রনির বলে কাভারে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেওয়ার আগে ৮ বলে ১০ রানের ইনিংস খেলেন তামিম। তাকে আউট করার পরের ওভারে ওয়াইডকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। চতুর্থ ওভারে রনির করা প্রথম বলটি লেগস্টাম্পের কাছ দিয়ে বেরিয়ে যায়। রংপুরের ফিল্ডারদের জোরালো আবেদনের প্রেক্ষিতে আম্পায়ার আউট দেন। কিন্তু রিভিউতে বেঁচে যান মিরাজ। পরে আম্পায়ার এই বলটিকে ওয়াইড ঘোষণা করলে সাকিব-সোহানরা ঘিরে ধরেন আম্পায়ারদের। তাতে বেশ কিছুক্ষণ মাঠে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। মাঠে তো দর্শকদের উত্তেজনা ছিল পুরোটা সময়। স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে পুরোটা সময়ই ভেসে এসেছে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান। এই ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান যে সাকিবকে ঘিরেই ছিল, সেটিও বোঝা গেছে। অথচ মাঠে ঢোকার আগে সকল বৈরিতা ভুলে সাকিব-তামিমকে এক হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এই দর্শকরাই।

তামিমের পর দ্রুত মিরাজকে বিদায় করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলেছিল বরিশাল। তবে মুশফিক ও সৌম্য মিলে ৩৭ বলে ৪৭ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধ গড়েন। শুরুতে অস্বস্তি নিয়ে ব্যাটিং করলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হাত খুলে খেলতে থাকেন সৌম্য। কিন্তু মোহাম্মদ নবীর বল এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। সৌম্যর ব্যাট থেকে আসে ২২ রান। এরপর কাইল মায়ার্সকে সঙ্গে নিয়ে ২৭ বলে ৫০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন মুশফিক। এই জুটিতেই মূলত রংপুরের কাছ থেকে ম্যাচটি ফসকে যায়। ১৫ বলে ২৮ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে আউট হন মায়ার্স।

এরপর ডেভিড মিলারকে সঙ্গে নিয়ে মুশফিক ধীরস্থিরভাবে খেলতে থাকেন। ৯ বল আগে তাদের ২৪ বলে ৩৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বরিশাল। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটা সময় দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করেছেন মুশফিক। বরিশালের উইকেটকিপার ব্যাটার ৩৮ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৪৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হন। উইকেটের পেছনে তার চারটি ক্যাচও ছিল।

শুরুতে চাপ তৈরি করলেও পরে সেই চাপ অব্যাহত রাখতে পারেননি রংপুরের বোলাররা। দলের গুরুত্বপূর্ণ বোলার সাকিব কোটা পূরণ তো দূরে থাক, করেছেন মাত্র দেড় ওভার। ফারুকী কিপ্টে বোলিং করলেও খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। ১৬ রানে নিয়েছেন একটি উইকেট। এছাড়া নবী একটি উইকেট নিয়েছেন। দলের সেরা বোলার রনি ২০ রানে শিকার করেছেন দুটি উইকেট।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা একদমই বাজে করে রংপুর। সাইফউদ্দিনের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ৬ বলের ব্যবধানে শেখ মেহেদী হাসান (২) ও সাকিব (১) সাজঘরে ফেরেন। ওই শুরু মোড়ক লাগা। বরিশালের দারুণ বোলিংয়ের মুখে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে রংপুর। দলটির টপ অর্ডার থেকে মিডল অর্ডার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। কেবলমাত্র নিউজিল্যান্ড অলরাউন্ডার জিমি নিশাম প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। ২২ বলে ৪ চারে ২৮ রানে জেমস ফুলারের শিকার হন তিনি। দুই বলের ব্যবধানে নিকোলাস পুরান (৩) ও নিশাম আউট হলে পুরোপুরি চাপে পড়ে যায় রংপুর।

আরেক বিদেশি অলরাউন্ডার নবীও অবদান রাখতে পারেনি। ১৫ বলে ১২ রান করে আউন হন তিনি। ৭৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে একশর নিচে অলআউট হওয়ার শঙ্কায় পড়ে যায় রংপুর। কিন্তু সেখান থেকেই বদলে যায় দৃশ্যপট। পুরো ইনিংস জুড়ে রংপুরকে চাপে রাখলেও শেষ ৫ ওভারে খেই হারিয়ে ফেলে বরিশালের বোলাররা। ১৫ ওভারে রংপুরের সংগ্রহ ছিল ৭ উইকেটে ৮৩! বাকি ৫ ওভারে শামীমের ব্যাটে বরিশালের স্কোরবোর্ডে আরও ৬৬ রান যোগ হয়।

অষ্টম উইকেটে রনিকে নিয়ে শামীম গড়েন ৩১ বলে অবিচ্ছিন্ন ৭২ রানের জুটি। এই জুটির ওপর ভর করেই ১৪৯ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে ফেলে একবারের চ্যাম্পিয়ন রংপুর। রনি কেবল একপাশে থেকে শামীমকে সঙ্গ দিয়ে গেছেন। অন্যপ্রান্তে চার-ছক্কার ফুলঝুরি ফুটিয়ে দলের স্কোরকে দেড়শোর কাছে নিয়ে যান যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের এই ব্যাটার।

২০ বলে হাফ সেঞ্চুরি ছুঁয়ে শেষ পর্যন্ত ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন শামীম। চলতি আসরে ২০ বলে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সাকিব। এবার যৌথভাবে শামীম এই কীর্তি গড়লেন। ১৯তম ওভারে ওবেড ম্যাককয়ের বলে ৬ ছক্কা ও ২ চারে ২৬ রান তোলেন শামীম। মূলত ওই ওভারেই স্কোরবোর্ডকে সমৃদ্ধ করে ফেলে রংপুর। শামীম ২৪ বলে ৫ চার ও ৫ ছক্কায় নিজের ইনিংসটাকে সাজান। অন্যদিকে রনি ৯ বলে ১২ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। ২৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বরিশালের সেরা বোলার জেমস ফুলার। এছাড়া সাইফউদ্দিন ২৭ রানে নেন দুটি উইকেট। একটি করে উইকেট নেন মায়ার্স ও মিরাজ।

এ নিয়ে বরিশাল ফ্র্যাঞ্চাইজি চতুর্থবারের মতো ফাইনালের টিকিট কাটলো। একবারও এই দলটি শিরোপার স্বাদ পায়নি। এখন দেখার অপেক্ষা আগামী ১ মার্চ ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারিয়ে তারা বিপিএলের শিরোপা জিততে পারে কিনা।

উল্লেখ্য, ২০১৫ ও ২০২২ সালের পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে এবারের ফাইনাল, যেবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল বরিশালের। আগামী ১ মার্চ তৃতীয়বার দুই দলের দেখা হচ্ছে ফাইনালে। বরিশাল প্রথম আসরেই খেলেছিল ফাইনালে। ওইবার ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের কাছে হেরে যায় তারা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com